জাতিগত হিংসার ফলে অশান্তির আগুন লেগেই রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে।
গত বছরের মে মাসের ৪ তারিখ থেকে মনিপুরে শুরু হয় অশান্তি। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে অশান্তি অব্যাহত থাকলেও, তা নতুন মাত্রা পায় ১৯ জুলাই সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখে শিউরে ওঠে সারা দেশের মানুষ। ভিডিয়োটিতে দেখা যায়, ধর্ষণের পর দুই আদিবাসী মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরাতে। সরকারি মতে এখানে প্রায় ৩৩ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। এখনকার বাসিন্দাদের মধ্যে মেইতিরা প্রায় ৫৩ শতাংশ এবং কুকি ও নাগারা প্রায় ৪০ শতাংশ।
সমস্যার সৃষ্টি হয় মেইতি জনগোষ্ঠীর সাথে কুকি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর আইনি লড়াইকে কেন্দ্র করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি সমাজের লোকজন তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ২০১৩ সাল থেকে দাবি করে আসছিল। স্বাধীনতার আগে তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি ছিল বলে দাবি করে মেইতি সম্প্রদায়। হিংসা শুরু হয় গত ৩ মে মনিপুরে হাইকোর্টের একটি নির্দেশ অনুসারে। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে মেইতি সম্প্রদায়কে তফশিলি উপজাতিভুক্ত করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য হাইকোর্ট মনিপুর সরকারকে নির্দেশ দেয়। এরপরেই হাইকোর্টের নির্দেশকে কার্যত তোয়াক্কা না করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে কুকি সম্প্রদায়। এই আন্দোলন ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পরিণত হয়।
কুকিদের দাবি যে, কুকি জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতেই মেইতি নেতৃত্বাধীন মনিপুর সরকার এই উপায় বের করেছে। যদি মেইতিরা এই তফসিলি উপজাতির মান্যতা পায় তাহলে একেবারেই শেষ হয়ে যাবে নাগা ও কুকি জনজাতির মানুষেরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মণিপুরে নারীকে লক্ষ্যমাত্রা করা হচ্ছে কেনো?
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে ধর্ষণ হচ্ছে একটি শক্তির নির্মম কৌশল। ভয় দেখাতে, আধিপত্য বিস্তারে এবং সম্প্রদায়কে পরাধীন করার জন্য ব্যবহার করে আসা হচ্ছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল উপজাতীয় পরিচয়, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সংহতিকে ক্ষয় করা। এই নৃশংস কাজের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুরণতি হয়।
এই জঘন্য ইস্যুটি সমাধানের একান্ত প্রয়োজন। এ জন্য অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। কুকি, মেইতি এবং নাগা গোষ্ঠীর নেতাদের সাথে আলোচনা করে এই সমস্যা মেটাতে হবে এবং সম্প্রদায় গুলি যাতে ভালো প্রতিবেশী হিসেবে মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
Source-Ei Samay, Kolkata.
Contributed by:
Dhruba Halder
Dhruba is a student of Fourth Semester studying Political Science (Hons.) at Maynaguri College.
No comments:
Post a Comment