সাম্প্রতিককালে উত্তরাখণ্ড এর বিধানসভায় ইউনিফর্ম সিভিল কোড বিলটি পাস হয়েছে।
ইউনিফর্ম সিভিল কোড কী :
ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) ভারতে প্রস্তাবিত একটি আইনগত কাঠামো, যা ধর্ম, লিঙ্গ বা যৌনমুখিতা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য , ব্যক্তিগত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এটি গঠিত। যা ভারতের বর্তমান ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করবে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত আইন যেমন - বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার এবং দত্তক গ্রহণের মতো বিষয়গুলি । এবং এই বিষয়টি ভারতীয় সংবিধানের ৪৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে আছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এটি রাষ্ট্রের নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে উল্লেখিত।
ভারতবর্ষ হলো বহু ধর্মভিত্তিক দেশ। তাই এখানে প্রত্যেকটি ধর্মের মানুষের নির্দিষ্টকিছু নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম নীতি অনুযায়ী তারা তাদের ধর্মপালন এবং সামাজিক জীবন যাপন করে। এই ধর্ম পালনের অধিকার ভারতীয় সংবিধান এর ২৫ নং ধারা মৌলিক অধিকার এর মধ্যে দিয়ে ভারতীয় নাগরিক দের দেয়।
তবে সাম্প্রতিক কালে এমন কিছু ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ রয়েছে যা মহিলাদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করে(বিশেষত মুসলিম মহিলাদের )। যার ফলস্বরূপ ৪৪ নম্বর ধারায় উল্লেখিত ‘ ইউনিফর্ম সিভিল কোড' এর ধারণা ব্যাপক হয়ে উঠেছে।
ইদ্দত : ইদ্দত এর অর্থ হল - এক নির্দিষ্ট সময় বা কাল যা প্রত্যেক মুসলমান রমণীকে তার স্বামীর মৃত্যু বা যেকোনো কারণে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হলে নিঃসঙ্গ অবস্থায় বা নির্জনতায় কাটানো আবশ্যক ইদ্দতের সময়কাল ইসলামী বিধানে চার মাস দশ দিন ধার্য আছে। বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামীর মৃত্যুর পর ওই নির্দিষ্ট সময় নিঃসঙ্গভাবে কাটানো যার উদ্দেশ্য হল ওই সময়ে স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন কিনা তার অনুধাবন করা - যদি দেখা যায় ওই সময় স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন সে ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবকাল পর্যন্ত স্ত্রীকে অপেক্ষা করতে হবে। সন্তান প্রসবের পরই দ্বিতীয় বিবাহের অধিকারী হবেন।
ইসলামী আইন অনুযায়ী -স্বামীর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব শুধুমাত্র ইদ্দত কাল পর্যন্তই। এবং যার ফলস্বরূপ 1985 সালে শাহবানু বেগম মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলে যে ক্ষেত্রে তালাকপ্রাপ্ত মহিলা নিজের ভরণ পোষণে অপারগ ইসলামী আইনের এই নীতি ঠিক নয়, অমানবিক। আদালতের মতে যে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নিজের সংস্থান ও ভরনপোষণ এ অক্ষম ইদ্দতকাল পর্যন্ত সে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর বর্তাবে ঠিকই, কিন্তু ইদ্দত পর্বের পর যদি তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী তার ভরনপোষণ বা জীবিকা নির্বাহের সক্ষম না হন আদালতের রায় সে ক্ষেত্রে ইজ্জত পর্বের পরও ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ১২৫ ধারার বিধান অনুযায়ী স্বামী তার তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীর দ্বিতীয় বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত বা স্ত্রী একাকী থাকাকালীন জীবন ধারণের আপারগ হলে ভোরেনপোষণের জন্য অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে। এবং সর্বোপরি ডক্টর তাহির মহামুদের লেখা ‘Muslim Personal Law’ বইটির একটি উদ্ধৃতি দেন , যেখানে বলা হয়েছে ভারতবর্ষের জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য Uniform Civil Code এর কথা। এছাড়াও ইসলাম ধর্মে উল্লেখিত তিন তালাক প্রথাও মুসলিম নারীদের সামাজিক অধিকার কে ক্ষুন্ন করে। ইসলামী বর্ণিত নারীদের সম্পত্তির অধিকারের পরিমাণ 25 শতাংশ যা নারীর মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে।
তাই এমন একটি আইন প্রয়োজন যা ভারতবর্ষের মতো দেশে প্রত্যেক নারীর অধিকারকে সুনিশ্চিত করবে।
এই বিষয় কে কেন্দ্র কোরে পক্ষে ও বিপক্ষে মতবাদ রয়েছে
পক্ষে যুক্তি:-
- সমতা: একটি UCC-এর প্রবক্তারা যুক্তি দেন যে এটি নিশ্চিত করে যে সমস্ত নাগরিক তাদের ধর্ম নির্বিশেষে একই আইনের অধীন হয় তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমতার প্রচার করবে। তারা যুক্তি দেখান যে বর্তমান ব্যবস্থা কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী যেমন নারী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য করে।
- জাতীয় একীকরণ: সমর্থকরা আরও যুক্তি দেন যে একটি UCC একটি সাধারণ আইন তৈরি করে জাতীয় একীকরণকে উন্নীত করতে সাহায্য করবে যা সকল নাগরিকের সাথে সনাক্ত করা যায়। তারা যুক্তি দেখান যে বর্তমান ব্যবস্থা বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি তৈরি করে।
- সরলতা: একটি UCC ব্যক্তিগত আইনের একাধিক সেটের প্রয়োজনীয়তা দূর করে আইনি ব্যবস্থাকে সরল করতে পারে। এটি মানুষের পক্ষে আইন বোঝা এবং মেনে চলা সহজ করে তুলতে পারে।
- ধর্মীয় স্বাধীনতা: UCC এর বিরোধীরা যুক্তি দেয় যে এই দ্বারা নাগরিক এর ধর্মীয় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে।
- সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য: বিরোধীরা আরও যুক্তি দেয় যে একটি UCC সমস্ত সম্প্রদায়ের উপর অভিন্ন আইন আরোপ করে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করবে। তারা যুক্তি দেয় যে প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব স্বতন্ত্র রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য রয়েছে যা সম্মান করা উচিত।
No comments:
Post a Comment